নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জ শহরের জিমখানা টু সদর উপজেলার ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়নের দেওয়ানবাড়ি সড়ক এবং জিমখানা টু কাশিপুর খিল মার্কেট সড়কে প্রতিদিন অবৈধ ইজি বাইক (অটোরিক্সার) চাঁদাবাজদের অবৈধ চাঁদাবাজি যেন কিছুতেই থামছেনা। এসব ইজি বাইক চাঁদাবাজরা বীরদর্পে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ সহ সকলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এসব অবৈধ ইজি বাইকের চাঁদাবাজদের তাহলে রুখবে কে? এমনটাই প্রশ্ন প্রতিদিন এই সড়কগুলোতে চলাচলরত ইজি বাইক চালক ও সাধারন যাত্রীদের।
শনিবার (৮আগষ্ট) ঘড়ির কাটা দুপুর ২টা শহরের জিমখানা অবৈধ ইজি বাইক ষ্ট্যান্ডে সবুজ মিয়া (ছদ্ধ নাম) গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় শুনেই বলতে শুরু করেন ‘গরীবের পেটে চাঁদাবাজদের লাথি’ স্যার। প্রতিদিন এই জিমখানা ষ্ট্যান্ডে আমাদের গাড়ি প্রতি দিতে হয় ১৫০টাকা করে। বৃষ্টি, বাদল, ঝড় তুফান যাই হোক না কেন ষ্ট্যান্ডের টাকা তাদেরকে দিতেই হবে। অপরদিকে কাশিপুর দেওয়ানবাড়ি ও খিল মার্কেট ষ্ট্যান্ড থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছে ৪০টাকা করে। এই সড়কগুলোতে গাড়ির সংখ্যা আনুমানিক ৩ শ’র মত। এই চাঁদার টাকার কারনে আমরা গাড়ি চালকরা অনেকটা বাধ্য হয়েই যাত্রীদের কাছ থেকে ৫টাকা করে ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছি। এই সড়কে পূর্বে ১০টাকা ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও আমরা বর্তমানে ৫টাকা করে বাড়িয়েছি। এতে করে সাধারন যাত্রীদের সাথে আমাদের প্রতিদিনই ঝগড়া বিবাদ হচ্ছে।
অপর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর থানার জিমখানা টু কাশিপুর দেওয়ানবাড়ি এবং জিমখানা টু কাশিপুর খিল মার্কেট এলাকায় প্রতিদিন চলছে সরকার নিষিদ্ধ এসব অবৈধ ইজি বাইক। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যার কোন প্রকার নেই লাইসেন্স কিংবা অনুমোদন। উপজেলা পরিষদ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এসব অবৈধ ইজি বাইক চলাচলে কোন প্রকার অনুমোদন দেয় না। স্থানীয় এলাকার এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি, হত্যা মামলার আসামী, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীরাই সরকার নিষিদ্ধ এসব অবৈধ ইজি বাইকের ষ্ট্যান্ড বসিয়ে চাঁদাবাজি করে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এই টাকার রাজস্ব পাচ্ছে না জেলা প্রশাসন পাচ্ছে না সিটি কর্পোরেশন।
সূত্র থেকে আরো জানা যায়, কাশিপুর দেওয়ান টু শহরের জিমখানা এবং কাশিপুর খিলমার্কেট টু জিমখানা ষ্ট্যান্ডে প্রকাশ্যেই সরকার নিষিদ্ধ অবৈধ এসব ইজি বাইক থেকে চাঁদা আদায় করছে শহরের ১নং বাবুরাইল এলাকার রানা, হান্নান, মহিউদ্দিন, লাভলু সহ আরো কয়েকজন। প্রতিদিন এই সড়ক গুলোতে ইজি বাইক চলাচল করে অন্তত ৩ শ’ টির মতো। জিমখানা ষ্টান্ড থেকে গাড়ি প্রতি ১৫০ টাকা এবং কাশিপুর দেওয়ানবাড়ি ও খিলমার্কেট থেকে নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা করে। এই সড়কের ষ্ট্যান্ডগুলো থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হচ্ছে ৫৭ হাজার টাকা যা প্রতি মাসে ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা এসে দাড়ায়!
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১২ অক্টোর সদর উপজেলার ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়নের হোসানী নগর এলাকায় রাত ৮টায় একটি রিক্সা গ্যারেজের ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মিল্টন হাওলাদার (৪০) ও পারভেজ আহমেদ (৩০) নামের দুই ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানার এসআই মোজারুল ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১২৫জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর মজিবুর রহমান। শহরের ১নং বাবুরাইল এলাকার বিএনপি নেতা মজিদ ও তার আপন ছোট ভাই হাসান এই হত্যা মামলার হুকুম দাতা বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়! মূলত এই দুই জনের সেল্টারেই চলছে শহরের জিমখানা এলাকার অবৈধ ইজি বাইক ষ্ট্যান্ডটি। জিমখানার অবৈধ ইজি বাইক ষ্ট্যান্ডে মজিদ ও হাসানের হয়ে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করছে রানা, হান্নান, মহিউদ্দিন ও লাভলু। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমোদনকৃত জিমখানা বটতলায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সিএনজি অটোরিক্সা চালক ইউনিয়ন নামের অপর একটি বৈধ ষ্টান্ডের নাম ভাঙ্গিয়ে জিমখানা ষ্ট্যান্ডে সরকার নিষিদ্ধ এসব ইজি বাইক থেকে প্রতি মাসে চাঁদাবাজি করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। বিষয়টি প্রশাসনের আমলে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।